মেরাই থং

সাজেক-নীলগিরির চেয়েও সুন্দর এই জায়গাটি

সাজেকে যেন সবুজের বুকে মেঘের রাজত্ব চলে। বর্ষা মৌসুমে চিরসবুজ সাজেক সাদা মেঘে আচ্ছাদিত থাকে। শীতে নেয় ভিন্ন রূপ। এক কথায় সাজেককে মেঘের বাড়ি বললেও ভুল হবে না। সবমিলিয়ে সাজেক এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমির নাম। কিন্তু জানেন কি? সাজেকের চেয়েও সুন্দর জায়গা আছে দেশেই! বলছিলাম মেরাই থং-এর কথা। পায়ের পাতায় মেঘের ছোঁয়া, চোখের পাতায় মেঘলা ধোঁয়া, আর ছাতা মাথায় ভেজা ঘাসে শোয়া—সবকিছু বারবার অপার্থিব সুখের জানান দেয় এই জায়গাটি।

‌‘মারায়ংতং’, ‘মারাইংতং’, ‘মেরাইথং’ বিভিন্ন নামেই ডাকা হয় এই পাহাড়টিকে। বান্দরবানের আলিকদম এই পাহাড়ের ঠিকানা। উচ্চতা প্রায় ১৬৪০ ফিট। পাহাড়ের চূড়ায় উঠেই যেটা সবার প্রথমে চোখে পড়ে, তা হল বিশাল একটি জাদি। জাদি মানে বৌদ্ধদের পূজা-অর্চনার জন্য বানানো বুদ্ধমূর্তি। এমনভাবে জাদিটি বানানো যেন সে দূর কোনো প্রান্তের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির রহস্য নিয়ে ভাবছে আর স্মিত হাসি ফুটে উঠছে তার ঠোঁটে। জাদির চারদিকে খোলা ও ওপরের দিকে চালা।

পায়ের পাতায় মেঘের ছোঁয়া, চোখের পাতায় মেঘলা ধোঁয়া

পায়ের পাতায় মেঘের ছোঁয়া, চোখের পাতায় মেঘলা ধোঁয়া

ওপরের অংশটুকু সমতল। এখান থেকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে জনবসতি। নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কূলে দেখা যায় ফসলের ক্ষেত। এ পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরং অন্যতম। এই পাহাড়ের নিচে থাকে মারমারা। আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে মুরংদের পাড়া। এরা পাহাড়ের ঢালে তাদের বাড়ি বানিয়ে বসবাস করে। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর, মুরগি। কখনো গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠও রাখা হয় স্তূপ করে।

পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও তাদের নিত্যদিনের আয়-রোজগারের জন্য এই পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিদের অনেকেই পাহাড়ে জন্মানো মুলি বাঁশ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই অঞ্চলটাতে প্রচুর পরিমাণে তামাকেরও চাষ হয়।

পাহাড় থেকে দেখা রাতের আকাশ

পাহাড় থেকে দেখা রাতের আকাশ

নির্দেশনা

ঢাকা থেকে চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে চান্দের গাড়ি দিয়ে আলীকদম যাওয়ার পথে আবাসিকে নেমে যাবেন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬০ টাকা করে। আবাসিকে নেমে ডান পাশের রাস্তাটা ধরে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মেরাই থংয়ে। সেখানে খাবার ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, কাজেই শুকনো খাবার ও পানি সমতল থেকেই নিয়ে যেতে হবে।